হাইড্রোপনিক একটি অত্যাধুনিক ফসল উৎপাদন পদ্ধতি। অতি লাভজনক ফসলের ক্ষেত্রে এই হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানিতে গাছের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। জনবহুল দেশে যেখানে স্বাভাবিক চাষের জমি কম কিংবা নাই সেখানে ঘরের ছাদে বা আঙ্গিনায়, পলি টানেল, নেট হাউজে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন সম্ভব। উন্নত বিশ্বে যেমন, ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, তাইওয়ান, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, এবং মধ্য প্রাচ্যের দেশসমূহে বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে সারা বছরই সবজি ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব এবং উৎপাদিত সবজি ও ফলে কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এ সবজি ও ফল নিরাপদ যার বাজার মূল্য অধিক। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সাফল্যজনকভাবে ক্যাপসিকাম, লেটুস, টমেটো, শসা, ক্ষীরা, স্ট্রবেরী, বেগুন এবং বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপন্ন করা সম্ভব।
হাইড্রোপনিক ব্যবহার পদ্ধতি: সাধারণত দুটি উপায়ে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়:
১। | সঞ্চালন পদ্ধতি |
২। | সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি |
সঞ্চালন পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানসমূহ যথাযথ মাত্রায় মিশ্রিত করে একটি ট্যাংকিতে নেয়া হয় এবং পাম্পের সাহায্যে পাইপের মাধ্যমে ট্রেতে পুষ্টি দ্রবণ সঞ্চালন করে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন অন্ততঃপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা পাম্পের সাহায্যে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু রাখা দরকার। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রথম বছর ট্রে, পাম্প এবঙ পাইপের আনুসঙ্গিক খরচ একটু বেশি হলেও পরবর্তী বছর থেকে শুধু রাসায়নিক খাদ্য উপাদানের খরচ প্রয়োজন হয়। ফলে দ্বিতীয় বছর থেকে খরচ অনেকাংশে কমে যাবে।
সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে একটি ট্রেতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ পরিমিত মাত্রায় সরবরাহ করে সরাসরি ফসল উৎপাদন করা হয়। এই পদ্ধতিতে খাদ্য উপাদান সরবরাহের জন্য কোন পাম্প বা পানি সঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান মিশ্রিত দ্রবণ ও উহার উপর স্থাপিত কর্কশীটের মাঝে ৫-৭ সেমি পরিমান জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে এবং কর্কশীটের উপরে ৪-৫টি ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে সহজেউ বাতাস চলাচল করতে পারে এবং গাছ তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন কর্কশীটের ফাঁকা জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারে। ফসলের প্রকারভেদে সাধারণত ২-৩ বার এই খাদ্য উপাদান ট্রেতে যোগ করতে হয়। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সহজেই এই পদ্ধতি অনুসরন করে প্লাস্টিক বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল ইত্যাদি ব্যবহার করেও বাড়ির ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করতে পারে। এতে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন: হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের জন্য স্পঞ্জ ব্লক ব্যবহার করা হয়। সাধারণত স্পঞ্জকে ৩০ সেমি × ৩০ সেমি সাইজে কেটে নিতে হয়। এই স্পঞ্জকে ২.৫ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ২.৫ সেমি প্রস্থ বর্গাকারে ডট ডট করে কেটে নিতে হয় এবং এর মাঝে ১ সেমি করে কেটে প্রতিটি বর্গাকারে স্পঞ্জে এর মধ্যে ১টি করে বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের পূর্বে বীজকে ১০% ক্যালসিয়াম অথবা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ বপনের পর স্পঞ্জকে ১টি ছোট ট্রেতে রাখতে হবে। এই ট্রের মধ্যে ৫-৮ সেমি পানি রাখতে হবে যাতে স্পঞ্জটি পানিতে সহজে ভাসতে পারে। চারা গজানোর ২-৩ দিন পর প্রাথমিক অবস্থায় ৫-১০ মিমি খাদ্যপাদান সম্বলিত দ্রবণ ১ বার এবং চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর থেকে চারা রোপণের পূর্ব পর্যন্ত প্রতিদিন ১০-২০ মিলি দ্রবণ দিতে হবে।